আলমগীর মাহমুদ


দখিনা হাওয়া’ কে না চায়! প্রেমিক? প্রেয়সী?  আমি? তুমি? সে?। কক্সবাজারের দক্ষিণা জনপদ উখিয়া টেকনাফের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ উখিয়া কলেজ আমার কর্মস্থল হওয়ায় সেই দখিনা হাওয়া গায়ে মাড়াইত,শিহরণ তুলতো,ভাব জাগাতো।

ইদানীং দক্ষিণা হাওয়া দাক্ষিণ্যের ধন। দক্ষিণ যাত্রার কথা মনে হইলে প্রত্যেকটা সকালে আগুনের ফুলকির মত আবহ শিশিরের বেশে মনেরে বুলিয়ে যায় ‘ইজ্জত,জ্যাম,একসিডেন্ট বিনে ফিরবিতো!

১২ই আগষ্ট সকালবেলা। জাওয়াদ, আমার ছোট ভাই মরহুম শাহজাহান মাহমুদের মেঝ ছেলে। ৬ষ্ট শ্রণির ছাত্র । ফোনে জানতে চায় ‘বড়বাবা প্রথম আলোর খবর ২৭১ টা কলেজ সরকারি হয়েছে এখানে কি উখিয়া কলেজ আছে? প্রসঙ্গভ্রমে নিতে কই, বঙ্গমাতা ফজিলতুন্নেসা মুজিব মহিলা কলেজ নামে প্রধানমন্ত্রীর মা’র নামেও একটা কলেজ আছে ঐটা ও আদর পায়নি বাবা।

সে আমারে দ্বিতীয় প্রশ্ন রাখে তোমাদেরটা অনার্স কলেজ না? তা ঠিক আছে। তবে একটাওতো লিষ্টে বসার চেয়ার পেল না।
আরো কঠিন প্রশ্ন রাখে তোমাদের মতো যোগ্যতা আছে, আদর না পাওনে বাদ পড়েছে এমন কোন কলেজ কক্সবাজারে আছে?… আছেতো মহেশখালী কলেজ।

তারা বাদ পড়ল কেন? ওখানে বঙ্গবন্ধুর নামে মাঝবয়েসী মহেশখালী কলেজের ছোট ভাইয়ের মতো একটা কলেজ ছিল ঐটা নেক নজর পাওনে বুড়া কলেজটা ছিটকে পড়েছে।

এবার তার প্রশ্ন কলেজগুলো সরকারি হতে কি কি যোগ্যতার পরীক্ষায় পাশ করন লায়। উত্তরে একটি কথাই কইলাম ‘এবার চাড়িয়া আইলে আলোচনার ১ নং আলোচ্য বিষয় হইবে “কলেজ সরকারি হওনে কি যোগ্যতা লায়” সব কথাতো আর মোবাইলে বলন যায় না, যদি কেউ হুইন্না ফেলে!

ছেলেটা চুপচাপ কিছুই বলছে না, বলছে না,লাইনও কাটে না। কিরে.. কথা নাই কেনরে! এবার বেশ গুরুগম্ভীর কণ্ঠে কয় “ভাগ্য খারাপ বাবা!..বলে লাইনটা কেটে দেয়।

তার এমন জবাব আমার বুকে হিরোশিমা, নাগাসাকিতে আনবিক বোমার আঘাতের অনুভূতি বিলায়। আকাশ ভেঙ্গে ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে যাবার দৃশ্য ধোঁয়াশার মতো আবহ দিয়ে যাচ্ছিলো। কারণ একটি গুমর ছেলেরা জেনে গেল । এরপর যেদিকেই যাই আমার কানে শুধু বাঁজতেই রয় ” ভাগ্য খারাপ বাবা! ভাগ্য খারাপ!

রাতে ঘুমোতে গেলাম চোখের চূড়ায় চূড়ায় ঘুম। হঠাৎ শব্দ “ভাগ্য খারাপ বাবা”চমকে উঠি ঘুম ভেঙ্গে যায়। বারবার এমন পীড়ায় মনেরে ভাল করে বুঝাই ” জীবনে যাহ পেয়েছি, তাহাই আমার।যাহ পাইনি তাহ আমার নয়।

তের তারিখের সকালবেলা। জয়ন্তী মেডামের আক্ষেপ বিশ্বখ্যাত উপজেলায় একটা কলেজ ও যদি প্রধানমন্ত্রীর দরদ পাইতো কোষাগার কি খসে পড়তো? ইয়াং অধ্যাপক জালাল, অধ্যাপক সাকিব, অধ্যাপক মাসুদের বেশ মন খারাপ তারা ষ্টেটাসে মনের ভাব সকালে প্রকাশ করতে দেখেছি।জানতে চাইলাম বিরহের কারন কি?… আমাদের সরকার ক্ষমতায় অওনে আল্টিমেটাম দিতে না পারার যাতনা।

ফিরতি যাত্রায় তুলাবাগান এলাকায় বঙ্গমাতা ফজিলতুন্নেসা মুজিব মহিলা কলেজের শিক্ষকদের বহনকারী বাসটি যান্ত্রিক ত্রুটিতে চলার সক্ষমতা হারায়।অধ্যাপক হেলাল চৌধুরী, অধ্যাপক জাফর, ছন্দা চৌধুরীর সাথে আরো দুজন মেডাম বেশ ফ্যাকাশেভাবে গাড়িতে উঠছে আর বলছে “আমরা যেদিকে যাই সাগর ও শুকিয়ে যায়। যে ঢাল ধরি সে ঢাল ভেঙ্গে পড়ে। হায়রে কপাল এই লিখন কেন আমাদের? আমরা কি জন্মপাপে?

কইলাম,না পাওয়ার বেদনা এত পোড়ালে শরীরে আঘাত হবে।তারা আমারে হুনায়,আপনি প্রায়ই আমাদের কইতেন যাদের কপাল খারাপ তারাই সকালবেলা দক্ষিনমুখী যাত্রা করে।ভাবছিলাম কপালে যাহ থাকবে থাক, অন্তত দক্ষিণা হাওয়াতো পাওয়া যাবে।একি হইল হাওয়া ও শেষ।পাওয়া ও শেষ।

লিংরোড ছূঁই,ছুই পাশের সীটে অধ্যাপক অজিত দাস, অধ্যাপক আকবর বিরহে একাকার হয়ে মনঃতাপ কমাতে ব্যস্ত। আমি হালকা করতে রসিকতায় কইলাম ” চিন্তা বিশালতায় বিলীন করো নইলে খবর আছে।”
আকবরের ফিরতি জবাব আমরা খেয়ে না খেয়ে ‘শুকর আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারায় অভ্যস্থ ‘।”আল্লাহ যাহ করে ভালর জন্য করে ”।
এমন কথায় মনেরে বুঝন যায় না! মৃদুহাসিতে লিংকরোড নামতে নামতেই কইয়া যায় এ দুইটার সাথে আরো একটা দিয়ে গেলাম.. “এই সবই ছিল আমাদের কপাল লিখন.’..আপাতত আজকের মতো মুলতবি ঘোষণায় ঘোষণায় হউক বিদায়….


লেখক ; বিভাগীয় প্রধান। সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।উখিয়া কলেজ, কক্সবাজার।
alamgir83Cox@gmail.com